শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন

আপডেট

হোলির রঙে রঙিন কুবি

আব্দুল্লাহ, কুবি প্রতিনিধি:
গোলাপী-বেগুনী রঙের ছটাক বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারাদিনের ক্লাস শেষে ক্লান্ত শরীরে বের হয়ে আসতেই একদল সহপাঠী দৌড়ে এসে গালে ছুইয়ে দিয়েছে আবির। সঙ্গে সঙ্গে ক্লান্তি ভুলে হাসির আনন্দে শিক্ষার্থীরাও মত্ত হচ্ছেন আবির, গুলাল নিয়ে রঙ খেলায়। দোলাযাত্রায় এ রঙিন দৃশ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সনাতন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বারের মতো হলো দোল উদযাপন৷
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ছিলো সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘দোল পূর্ণিমা। দেশের বিভিন্ন স্থানে দোল উৎসব পালিত হয়। সাধারণত দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এদিন সরকারি ছুটি দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থাকে খোলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ দিন তাই ক্যাম্পাসেই কেটে যায়৷
দোলযাত্রা একটি হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে দোল উদযাপনের নিয়ে সনাতন  শিক্ষার্থীরা জানান অনেকেরই আবদার ছিলো যে ক্যাম্পাসে একটা হোলি উৎসব হোক। শিক্ষার্থীরা এতোদিন মূলত এ উদযাপন শহরে ইশ্বর পাঠশালায় যেয়েই করতেন। কিন্তু এ বছর বিভিন্ন কারণ বিবেচনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উৎসাহে এটা ক্যাম্পাসেই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় হোলি খেলার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনটি পালন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী দীপ জানান, “মূলত শহরে গিয়ে অনুষ্ঠান করাটা ভিন্ন কারণে কষ্টকর হয়ে যেতো আমাদের জন্য৷ বাসে আসা যাওয়ার অসুবিধা, যেমন সাধারণত আমাদের বাসে ভিড় থাকেই। সেখানে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আলাদা বাস না নিয়ে গেলে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হতো৷ তাছাড়া, সবার অংশগ্রহণও নিশ্চিত হতো না এভাবে৷ কিন্তু ক্যাম্পাসে করলে মোটামুটি সবাই-ই থাকতে পারবে।”
সকলের অংশগ্রহণে এমন আয়োজনে তিনি আরো বলেন, “ক্যাম্পাসে দোল করার একটা বড় কারণ হচ্ছে অন্য ধর্মের যারা আছেন তারা অনেকেই এই রঙের উৎসবকে পছন্দ করেন৷ এ কারণেই মূলত সবাইকে নিয়ে আনন্দ করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে হোলি উৎসব করেছি। যাতে সবার অংশগ্রহণে সম্প্রীতি চর্চার সুযোগ হয়৷”
শিক্ষার্থীরা মিলে এমন আয়োজনে ছুটি না পাওয়া, পরিবার থেকে দূরে প্রথম হোলির আফসোস কিছুটা হলেও লাঘব করেছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী তিথী দেব নাথ।  নিজের অনুভুতি জানিয়ে বলেন, দোলপুর্নিমা / হোলি উৎসব আমাদের কাছে একটা বিশেষ দিন। এই দিনে আমরা পরিবার – পরিজন সাথে নিয়ে পালন করি। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই উৎসবে কোনো আলাদা ছুটি  নেই, এমতাবস্থায় সবাইকে নিয়ে হোলি উৎসব পালনের মাধ্যমে সবাই মিলে আমরা অনেক আনন্দের সাথে হোলি উৎসব পালন করতে পেরেছি।
তবে, এ ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রার্থনা করার নির্দিষ্ট স্থান নেই৷
তারা জানান, দোল পূর্নিমার মুল অনুষ্ঠান হচ্ছে দোল পুজা৷ দোল পুজায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে দোলনায় রেখে দোল দেওয়া হয় এবং আবির দেওয়া হয়৷ কিন্তু ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার প্রার্থনার রুম না থাকায় এই পূজোর কাজটা করা যায়নি৷ তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজা করার জন্য যাতে অন্তত একটি প্রার্থনার রুম দেওয়া হয়৷ এতে ভবিষ্যতে এ ধরনের উৎসবগুলো আরো আনন্দমুখর এবং আরো বৃহৎ পরিসরে করা যাবে৷
উল্লেখ্য, বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোল- পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। এই বছর দোল পূর্ণিমা পড়েছে ৭ই মার্চ, বাংলায় ২২ ফাল্গুন। ৬ মার্চ বিকেল ৪টা ১৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে পূর্ণিমা শুরু হয়েছে। ৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |